খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় নিয়ে সবধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের হবে ৮ ফ্রেবুয়ারি। খালেদা অপরাধী সাব্যস্ত হলে দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রচারাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একই সঙ্গে সারাদেশে বিএনপি তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূচি নিচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ৮ ফেব্রুয়ারির রায়ের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। যদি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক কোন রায় আসে তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন রচিত হবে। যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠবে তা প্রতিরোধ করার শক্তি এই সরকারের নেই।

ইতিমধ্যে শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার অভিযান চলছে। খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় ও চাঙ্গা হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলটির নিয়মিত বৈঠক, সভাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মীদের সাহস যুগিয়ে আন্দোলন উপযোগী গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

এর আগে রায়ের তারিখ ঘোষণার পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের স্থানীয় কমিটির জরুরি বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া মামলা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে দিক নির্দেশনা দেন। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হলে কঠোর আন্দোলনে নামার পাশাপাশি তাকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ গড়ে তুলে বিএনপির আন্দোলনকে বেগবান করার কথা বলেন দলের সিনিয়র নেতারা।

রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান, জার্মানি, কুয়েত, স্পেন, সৌদি আরব, ইটালি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটিশ, ভ্যাটিক্যান সিটি, ডেনমার্ক, কানাডা, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, মরক্কো ও লেদারল্যান্ডস’র কূটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইউএসএআইডি’র সংস্থা) প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র গত রোববার নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। খালেদা জিয়ার সাজা হলে সরকার দলটি ভাঙার সযোগ ব্যবহার না করতে পারে এজন্যে গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে।

বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মনে করছেন, জিয়া অরফানেজ মামলাটি শুরুতেই খারিজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ন্যায়বিচার হলে জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া সম্মানজনক খালাস পাবেন। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ। তাই আদালতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাজা দেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।

এছাড়া এ মামলার রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বড় জমায়েতের অঘোষিত এই কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসছেন নেতাকর্মীরা। তাদের পুলিশের ধড়পাকড় এড়াতে কৌশলী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গণগ্রেপ্তারের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম নেতা গ্রেপ্তার হলে পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ রকম ধাপ রয়েছে তিনটি।

চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই হাইকমান্ডের এই নির্দেশনার বার্তা ব্এিনপির নেতাকর্মীদের কাছে দেয়া হবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। জেল-জুলমে নিয়ে মোটেও বিচলিত নন তারা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর